নৌ-পরিচালনা ও সাগরে দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা অনেক বেশি দক্ষ বলে জানাচ্ছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা।
কিন্তু নারীদের তুলনায় পুরুষেরা কেন বেশি পারদর্শী? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে এক গবেষণা চালানোর পর ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরুষের এই পারঙ্গমতার পেছনে তাদের কোনো সহজাত গুণের ব্যাপার নেই।
বরং বহুযুগ ধরে নারী-পুরুষের মধ্যে সমাজে যে বৈষম্য চলছে – এটিকে তারই ফল বলে ব্যাখ্যা করছেন বিজ্ঞানীরা।
ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যাওয়া রোগ নিয়ে গবেষণা করছিলেন একদল বিজ্ঞানী। গবেষণার অংশ হিসেবে বানানো হয়েছিলো ‘সি হিরো কোয়েস্ট’ নামে একটি কম্পিউটার গেম।
এটি ছিল একজন বুড়ো নাবিক, যে তার স্মৃতি ভুলে গেছে, তাকে বাঁচানোর খেলা। সেই নাবিককে বাঁচাতে হলে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে স্পর্শ করে-করে শূন্য দ্বীপ আর বরফে ছাওয়া সমুদ্রের একটা চার্ট তৈরি করতে হতো খেলোয়াড়দের।
এই খেলায় অংশগ্রহনকারীদের দিক-চেনার ক্ষমতা আর নৌচালনার কলা-কৌশল বিষয়ক তথ্যগুলো গোপনে রেকর্ড করা হচ্ছিলো।
রেকর্ড করা তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে প্রথমেই জানা গেলো যে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা নৌচালনায় অনেক বেশি দক্ষ।
কিন্তু পুরুষেরা কেন বেশী দক্ষ?
এই প্র্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গবেষকেরা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম্স জেন্ডার গ্যাপ ইন্ডেক্স বা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের লিঙ্গ বৈষম্য বিষয়ক সূচকের তথ্যগুলোকেও পর্যালোচনা করেন।
সব তথ্য পর্যালোচনা শেষে গবেষকেরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে পুরুষদের পারঙ্গমতার পেছনে বৈষম্যই মূল কারণ।
গবেষকেরা দেখান যে, যে সব দেশে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য কম – সেসব দেশে নেভিগেশানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের দক্ষতার পার্থক্যও কম ধরা পড়েছে।
কিন্তু যেসব দেশে নারী ও পুরুষের ফারাক যত বেশি – সেসব দেশে নেভিগেশনে পুরুষদের তুলনায় নারীরা অনেক পিছিয়ে।
‘সি হিরো কোয়েস্ট’ গেম থেকে পাওয়া তথ্য ভিত্তিতে গবেষকেরা জানান, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও নরওয়ের অংশগ্রহণকারীরা নৌচালনায় সবচে’ বেশি দক্ষ।
তাছাড়া ধনী দেশগুলোর বাসিন্দারাও নেভিগেশনে খুবই দক্ষ বলে জানায় গবেষকেরা।
‘সি হিরো কোয়েস্ট’ গবেষণায় এটিও উঠে আসে যে, টিনএজ বয়স পার হবার পর থেকেই আসলে মানুষের দিক বিষয়ে আন্দাজ ও বুদ্ধি লোপ পেতে থাকে।
বলা হচ্ছে, ‘সি হিরো কোয়েস্ট’ গেমের জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে ডিমেনশিয়া বিষয়ে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গবেষণা।
আলঝেইমার রিসার্চ ইউকে-এর পরিচালক টিম পেরি বলছেন, সি হিরো কোয়েস্ট গেম থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, স্থান, বয়স ইত্যাদি নানান কিছু মানুষের দক্ষতায় প্রভাব ফেলে।
তিনি আরো বলেন, নেভিগেশন নিয়ে জানার একটা দারুণ সূচনা হলো। এইসব তথ্য-উপাত্ত থেকে আরো দারুণ কিছু বেরিয়ে আসতে পারে বলেও তিনি আশা করছেন।
এই প্রকল্পটির জন্য অর্থ যোগান দিয়েছিল ডয়চে টেলিকম আর এই গেমটি ডিজাইন করেছিল গ্লিচার্স।